সুদ : পরিষ্কার বিদ্রোহ
সুদ : পরিষ্কার বিদ্রোহ
যে ব্যক্তিই কোনো মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছে সে এতটুকু কথা অবশ্যই জানে যে, ইসলামী শরী‘আতে সুদকে হারাম ঘোষণা করা হয়েছে। বরং এ কথা তো অনেক অমুসলিমও জানে। এ কথাও অনেকের জানা আছে যে, সুদের প্রচলন পৃথিবীতে নতুন নয়। ইসলামপূর্ব জাহিলিয়াতেও এর প্রচলন ছিল। মক্কার কাফেরদের মধ্যে যেমন এর প্রচলন ছিল, মদীনার ইয়াহুদীদের মধ্যেও এর ব্যাপক রেওয়াজ ছিল। তারা কেবল ব্যক্তিগত ও দৈনন্দিন প্রয়োজন মেটানোর জন্যই যে সুদী লেনদেন করত তা-ই নয় বরং বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যেও সুদের লেনদেন হতো। তবে বিগত দু-শতাব্দীতে যে বিষয়টি নতুনরূপে সামনে এসেছে তা হলো, ইংরেজ বেনিয়ারা যখন পৃথিবীজুড়ে ক্ষমতা দখল করল, তখন তারা নতুন নতুন প্রক্রিয়ায় সুদখোর মহাজন ও ইয়াহুদীদের প্রবর্তিত সুদী কারবারের এমন ব্যাপক প্রচলন ঘটাল যে, তার ঘূর্ণাবর্তে পড়ে মানুষের বিচার-বুদ্ধি খেই হারিয়ে ফেলল। ক্রমে তার চিন্তা-ভাবনা উল্টোমুখে ধাবিত হতে থাকল। পরিশেষে তা এ পর্যন্ত গড়াল যে, আজ পৃথিবীতে সুদী ব্যবস্থাকেই ব্যবসা-বাণিজ্য, অর্থনীতি ও জীবন-জীবিকার মেরুদণ্ড মনে করা হচ্ছে।
ইসলামী শরীয়তে অনেক জিনিসই হারাম। কিন্তু সুদ সম্পর্কে আল্লাহ পাক কুরআনুল কারীমে যে কঠোর ধমকি ও সাবধান-বাণী নাযিল করেছেন যে, [তোমরা যদি সুদ পরিত্যাগ না করো, তাহলে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের পক্ষ হতে যুদ্ধের ঘোষণা শুনে নাও। -সূরা বাকরা : ২৭৯] এমন ধমকি অন্য কোনো গোনাহ সম্পর্কে নাযিল করেননি।
ইসলামের ভারসাম্যপূর্ণ সুদবিহীন আদর্শ ও বরকতময় ইনসাফভিত্তিক সুসম অর্থনীতির বাস্তবায়ন ও তার সুফল তখনই লাভ হবে, যখন বৃহৎ ব্যবসায়ীদের উল্লেখযোগ্য একটি সংখ্যা সুদের ধর্মীয় এবং জাগতিক, চারিত্রিক এবং আর্থিক ধ্বংসলীলা ভালোভাবে অনুধাবন করে এ থেকে মুক্তির জন্য আন্তরিকভাবে প্রস্তুত হবে এবং ক্ষমতাধর কোনো শাসক তার রাষ্ট্রযন্ত্রের সকল সামর্থ্য ও ক্ষমতা দিয়ে তাদের পৃষ্ঠপোষকতা করবে। এ চেষ্টারই অংশ হিসেবে এ পুস্তক সংকলন করা হয়েছে। আমাদের জীবন-জীবিকাকে সুদের অভিশাপমুক্ত রাখার জন্য এ কিতাব সকলের পাঠ করা উচিত।